সুস্থ থাকুন অনলাইনে
চারদিকে প্রচন্ড গরম, গরমে এক একজনের প্রাণ যায় যায় অবস্থা। গরমে সুস্থ থাকতে কত কিছুই না করছেন আপনি। পত্রিকায় পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে “এই গরমে সুস্থ থাকার ১০ উপায়” শীর্ষক নানা রকম আর্টিকেল। এই গরমে চারপাশে যখন এত হা-হুতাশ ধরনের অবস্থা, এত সুস্থ থাকার চেষ্টা, তখন গোপনেই কিন্ত অনেকে অসুস্থ হচ্ছেন অনলাইনের বিশাল দুনিয়ায়। একটু ভালো করে কান পাতলেই শুনতে পারবেন তারকা থেকে স্কুলছাত্র কেউই এখন আর বাদ যাচ্ছেন না হ্যাকিং স্প্যামিং এর হাত থেকে। আজকে এই তারকার ফেসবুক হ্যাক তো কাল ওই তারকার, আর এই তারকা রাজির বাইরে যারা আছেন তাদের অনলাইনে কোন ঝামেলা হওয়া মানে তো মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়া। আজকের এই লেখা মাথায় আকাশ ভাঙ্গাভাঙ্গি বন্ধ করার জন্য। অফলাইনে একটু সুস্থ থাকতে এত কিছু করছেন, অনলাইনে সুস্থ থাকতে একটু কষ্ট করে নাহয় এই লেখাটি একটানে পড়ে ফেললেন।
ফেসবুক বিড়ম্বনা
অনলাইনে যেসব ঝামেলা অহরহ হচ্ছে তার মধ্যে সম্ভবত এক নাম্বারে থাকবে ফেসবুকের অ্যাকাউন্ট হাতছাড়ার ব্যাপারটি। বাই বর্ন আমরা খুবই জ্ঞানী জাতি, ক্রিকেট থেকে শুরু করে পারমানবিক প্রকল্প এমন কিছুই নাই যেই জায়গায় আমরা আমাদের বিশেষজ্ঞ মতামত জাহির করি না। আর সেই জাহিরের সবচেয়ে ভালো অস্ত্রের নাম ফেসবুক। আমাদের সবার আর কিছু থাকুক না থাকুক একটা করে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট সবার থাকে। কিন্ত টাইমলাইনে যতই আগুন ঝরানো স্ট্যাটাস দিই না কেন, আমাদের বেশিরভাগের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট কিন্ত আনসিকিওরড অবস্থায় থাকে। আপনার আশেপাশের বন্ধু-বান্ধবকে জিজ্ঞেস করেন তাহলেই বুঝবেন। প্রায় সবাই এই ব্যাপার নিয়ে উদাসীন। অনেকেই আছেন যারা এইসব সিকিউরিটির ধার ধারেন না, উদাস উদাস গলায় বলেন “আমার ফেসবুক কে হ্যাক করবে”। কিন্ত সবচেয়ে বেশি ঝামেলাটা হয় এদের নিয়েই। এদের ফেসবুক অ্যাকাউন্টটার সামান্য কিছু হলেই ওনারা প্রায় আধপাগল অবস্থায় চলে যান। বন্ধু বান্ধবের অ্যাকাউন্ট থেকে স্ট্যাটাস দেন “তমুকের অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে, কোন স্ট্যাটাস তার দেয়া না”।
এই আধপাগল অবস্থা কাটানোর সবচেয়ে ভালো ব্যবস্থা হচ্ছে আজকেই আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্টটা খুব দ্রুত সিকিউর করে ফেলা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কিভাবে করবেন।
প্রথমত, আপনার ই-মেইল অ্যাকাউন্টটা আপ-টু-ডেট রাখবেন, অনলাইনে যে কোন অ্যাকাউন্ট খোলার প্রথম ধাপ হচ্ছে ই-মেইল অ্যাড্রেস দেয়া। এত গুরুত্বপূর্ণ যেটা তা তো একটু হালনাগাদ রাখতেই হবে। আপনার ই-মেইল অ্যাড্রেসটির পাসওয়ার্ড, সিকিউরিটি কোয়েশ্চেন এমন হতে হবে যাতে কোনভাবেই অন্য কেউ তা আন্দাজও করতে না পারে।
দ্বিতীয়ত, আপনার যে কোন অনলাইন অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড হতে হবে খুবই শক্তিশালী, আর কোন ভাবেই এক অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড আরেক অ্যাকাউন্টে ব্যবহার করবেন না। এখন আপনি জিজ্ঞেস করতে পারেন এতগুলা কঠিন পাসওয়ার্ড কী আকাশ থেকে পাবো? আর আমরা যেহেতু ফটোগ্রাফিক মেমোরির অধিকারী না তাই এতগুলা কঠিন পাসওয়ার্ড তো মনে রাখাও সম্ভব না। অবশ্যই সম্ভব। ধরেন আপনার নাম সাকিব আল হাসান, আপনার প্রিয় সংখ্যা ৭৫, আপনার ভালোবাসার মানুষটার নাম শিশির। এখন এখান থেকে একটা কঠিন পাসওয়ার্ড দাড়া করানোই যায়। সাকিব আল হাসানের SAH, শিশিরের নাম Shishir, আর প্রিয় সংখ্যা 75। সুতরাং আপনার পাসওয়ার্ড হতে পারে SAH$75$Shishir। কারো আন্দাজ করার জন্য এটা কিন্ত বেশ কঠিন পাসওয়ার্ড। আবার আপনার মনে রাখাও কঠিন কিছু না। এখন এই পাসওয়ার্ড যেখানে ব্যবহার করবেন সেই অনুযায়ী পরিবর্তন হবে। যেমন ফেসবুকের অদ্যাক্ষর F – সেই হিসেবে আপনার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড হতে পারে SAH$F75$Shishir আবার ইন্সটাগ্রামের পাসওয়ার্ড হতে পারে SAH$I75$Shishir। এমনভাবে পাসওয়ার্ড ব্যবহার করলে মনে হয় না আর কোন ঝামেলার কিছু আছে।
তৃতীয়ত, ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম সব জায়গাতেই ‘টুএফএ’ নামের একটা অপশন আছে, অপশনটি অ্যাকটিভেট করে রাখুন। অ্যাকটিভেট করার সময় আপনার ব্যক্তিগত মোবাইল নাম্বার দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করুন। এর সুবিধা হচ্ছে যদি কেউ আপনার ই-মেইল আর পাসওয়ার্ড পুরোটা কোনভাবে জেনেও যায় তবুও লগ ইন করার পর তাকে আরো একটি কোড দিতে হবে, যেই কোডটি এস এম এস মাধ্যমে আপনার মোবাইল ফোনে আসবে। যেহেতু আপনার ফোন আপনার কাছেই থাকবে তার মানে হ্যাক করা প্রায় ইম্পসিবল ব্যাপার স্যাপার।
চতুর্থত, অনেকেই আছেন ফেসবুকে বিভিন্ন অ্যাপ ট্রাই করেন। আপনার ক্রাশ কে, আপনার কার সাথে বিবাহ হবে, কে আপনাকে ভালোবাসে এইসব আর কি। এইসব অ্যাপ হচ্ছে বদের আখড়া। যতটা সম্ভব এইসব অ্যাপ এড়িয়ে চলবেন। আপনার কার সাথে বিয়ে হবে সেটা অ্যাপ দিয়ে বের করতে যেয়ে অ্যাকাউন্ট খোয়ানোর কী দরকার?
পঞ্চমত, প্রায় সব জায়গাতেই অ্যাকাউন্ট সিকিউর করার জন্য ‘সিকিউরিটি কোয়েশ্চেন’ নামের একটা অপশন থাকে। তাতে তিনটি প্রশ্ন দেয়া থাকে, আপনাকে তার উত্তর দিতে হবে। এর কারণ হচ্ছে যদি আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাকও হয় কখনো, আপনাকে জিজ্ঞেস করবে এই তিনটা প্রশ্নের অ্যান্সার কী? দিতে পারলেই আপনার অ্যাকাউন্ট আপনি রিগেইন করতে পারবেন। এখন কথা হচ্ছে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে খুবই ট্রিকস করে। ধরেন প্রথম প্রশ্ন করা হল – “What’s your current country?” আপনি স্বাভাবিক ভাবেই উত্তর দিবেন “Bangladesh”। এখন একটু ভাবেন, আপনার কারেন্ট কান্ট্রি যে বাংলাদেশ তা কারোই অজানা থাকার কথা না। আবার বাবার নাম, মায়ের নাম এগুলাও জানা খুব কঠিন কিছু না। এভাবে যে কেউ আপনার অ্যাকাউন্টটা পেয়ে যেতে পারে। তাই উত্তর দিতে হবে উল্টাপাল্টা টাইপের। যদি জিজ্ঞেস করে “What’s your current country?” আপনি উত্তর দিবেন “Shakib Al Hasan”, যদি প্রশ্ন হয় “What’s your mother’s name?” তাহলে উত্তর দিবেন “Bangladesh”। এই অ্যান্সারগুলা আপনি মনে রাখতে পারলেই হলো, সঠিক কি বেঠিক তার দরকার নেই। আপনার অ্যাকাউন্টও আর হ্যাক হবার বা হাতছাড়া হবার কোন ভয় নেই।
অনলাইন শপিং
ডিজিটাল বাংলাদেশ যতটা আগাচ্ছে ততটাই পাল্লা দিয়ে আগাচ্ছে আমাদের অনলাইন শপগুলা। প্রায় সব বড় ব্র্যান্ডের এখন অনলাইন শপ আছে, আর আছে হাজার হাজার ছোট ছোট অনলাইন শপ। অনেকেই আছেন যারা দোকানের ধাক্কাধাক্কির ভয়ে অনলাইনেই অর্ডার দিয়ে দেন। অনলাইন শপগুলোতে ক্যাশ অন ডেলিভারি ছাড়াও বিভিন্ন পেমেন্ট গেটওয়ে সেট করা থাকে। সেই পেমেন্ট গেটওয়েতে ভিসা, মাস্টারকার্ড, অ্যামেক্স দিয়ে পে করার ব্যবস্থা থাকে। এইসব পেমেন্ট গেটওয়ে ইউজ করার আগে নিশ্চিত হয়ে নিন এটা সেফ কিনা। দরকার হলে ওয়েবসাইটের সাপোর্টে কল করে জিজ্ঞেস করে নিতে পারেন। সেফ এবং সিকিওরড না হয়ে কখনোই আপনার কার্ডের নম্বর বা পিন অনলাইনে কোন ফর্মে ইনপুট করবেন না। সবচেয়ে সেফ অবশ্যই ক্যাশ অন ডেলিভারি, তাছাড়া রকেট কিংবা বিকাশেও পে করতে পারেন, তবে মাস্টার কার্ড অথবা ভিসা কার্ড অনলাইনে যতটা কম পারা যায় ততটা কম ব্যবহার করাই ভালো। আর যদি ব্যবহার করতেই হয় কমন সেন্স খাটিয়ে ব্যবহার করবেন।
স্প্যামিং/ফিশিং
কখনো স্প্যাম মেইল পাননি এই পৃথিবীতে সম্ভবত এমন কেউ নেই। স্প্যাম মেইলে আপনাকে ফ্রি পাওয়ার লোভ দেখাবে, ভয় দেখাবে আপনার গোপন কিছু বলে দেয়ার। সব কিছুর উদ্দেশ্য একটাই - আপনাকে যে কোন ভাবে লিংকে ক্লিক করানো। সেই লিংকে হয় কোন ভাইরাস অ্যাটাচমেন্ট থাকে অথবা কোন ম্যালওয়ার থাকে যেটা ক্লিক করা মাত্রই আপনার ফোন কিংবা পিসিতে ডাউনলোড হবে তারপর শুরু করবে আপনার পিসি বা ফোনের বারোটা বাজানো। সাধারনত কোন অ্যান্টিভাইরাস থাকলেই এই সমস্যার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তবুও যতটা পারবেন স্প্যাম মেইলের অ্যাটাচমেন্টে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকবেন। এমন মেইলও মাঝে মধ্যে আসতে পারে যাতে ক্লিক করা মাত্র দেখবেন ফেসবুকের মত পেজ অথবা জিমেইলের মতো পেজ, সেই সব পেজে ই-মেইল বা পাসওয়ার্ড দেয়া থেকে ১০০ হাত দূরে থাকবেন। facebook.com, gmail.com এইসব ওয়েবসাইট অথবা ফেসবুক টুইটারের অফিসিয়াল অ্যাপ ছাড়া কখনোই আপনার ই-মেইল এবং পাসওয়ার্ড ইনপুট করবেন না।
খুব সাধারন এই বিষয়গুলো মেনে চলুন, অনলাইনে এরপর থেকে আপনি আর কখনোই অসুস্থ হবেন না। আর এই কাঠফাটা গরমে অফলাইনে ভালো থাকার জন্য বেশি বেশি পানি খান। অনলাইন অফলাইন দুই জীবনের জন্যই শুভকামনা। ঈদের আগাম শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।
আপনার পাসওয়ার্ডের ধরন সুন্দর লেগেছে। 2FA নিয়ে বিস্তারিত লিখলে জানাবেন। অনেক জায়গাতেই এই অপশন খুঁজে পাচ্ছি না। ধন্যবাদ।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। 2FA কিন্ত সব জায়গায় থাকবে না। যেখানে থাকবে সেখানেই অ্যাকটিভেট করতে পারবেন। ফেসবুক, টুইটার, লিংকডইনে 2FA সাপোর্ট করে, বড় সব প্লার্টফর্মেই করে। এটা নিয়ে কোন কিছু লিখলে অবশ্যই মেইলে নোটিফিকেশন পেয়ে যাবেন।
আপনার পাসওয়ার্ডের ধরন সুন্দর লেগেছে। 2FA নিয়ে বিস্তারিত লিখলে জানাবেন। অনেক জায়গাতেই এই অপশন খুঁজে পাচ্ছি না। ধন্যবাদ।
আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। 2FA কিন্ত সব জায়গায় থাকবে না। যেখানে থাকবে সেখানেই অ্যাকটিভেট করতে পারবেন। ফেসবুক, টুইটার, লিংকডইনে 2FA সাপোর্ট করে, বড় সব প্লার্টফর্মেই করে। এটা নিয়ে কোন কিছু লিখলে অবশ্যই মেইলে নোটিফিকেশন পেয়ে যাবেন।
আপনি যেভাবে লিখেছেন এমন করে চলতে গেলে তো বিপদে পড়তে হবে। আমি ভাই নন টেক মানুষ এত কিছু বুঝি না। এত কিছু করে ফেসবুক ব্রাউজ করতে গেলে তো বিপদ।
মেজবাহ, এত পেইন নেয়ার কিছু নাই ভাই। যেভাবে চলতেছে সেভাবেই চালান। তবে সাবধান থাকলে আপনারই ভালো আর কি। একটু ঝামেলা হয়তো হবে সব ঠিক ঠাক করতে। তবুও, দাগ থেকে যদি দারুণ কিছু হয় তবে দাগই ভালো 😉