Examination

প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং কিছু অভিজ্ঞতা

এই তিন-চারদিন আগের কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘ ইউনিট পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নিয়ে সারা দেশে হায় হায় রব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা লজ্জিত ও হতাশ। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিচ্ছু ছেলে-মেয়েরা আর তাদের অভিভাবকেরা আতংকিত। দেশ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করেন এমন অধিকাংশ মানুষ বিরক্ত। শুধু মাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মুখে রা নেই। যতই বলা হয় 'প্রশ্ন ফাঁস' ততই ওনারা বলে 'কিছু না, কিছু না'। ওনাদের দোষ খুব একটা দেওয়া যায় না। আমাদের মহামান্য ভিসি স্যার এবং মহামান্য ডিন ম্যাডাম দুইজনই সদ্য নির্বাচিত। প্রথম এসাইনমেন্টেই কেউ চায় না ভুল স্বীকার করতে। তাই সংবাদ মাধ্যমে যতই প্রমাণসহ বলা হোক প্রশ্ন ফাঁস, ওনারা বারবার সেই ভাঙ্গা রেকর্ডই বাজিয়ে গেলেন। শিক্ষকরা মহান পেশায় নিযুক্ত, তাদের সব কিছুর ঊর্ধ্বে থাকা উচিত - এটা যেমন ধ্রুব সত্য, ঠিক এটাও ধ্রুব সত্য যে শিক্ষকরা রাজনীতির সাথে যুক্ত এবং রাজনীতি ময়দানে মাথা উঁচু করে রাখার জন্য সব করা যায়। এই কারনে শিক্ষকদের দোষ দেই না, নিজেদের কপালের দোষই দেই বারবার।

প্রশ্নপত্র ফাঁস যে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতেই হচ্ছে সেইটার জন্য ঢাকা ইউনিভার্সিটিকে শুলে চড়াতে হবে এমন কোন কথা নাই। প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তার চাকরি থেকে শুরু করে ক্লাস ফাইভের পিইসি পরীক্ষা এমন কোন প্রশ্ন নাই যেই পরীক্ষার কোন প্রশ্ন ফাঁস হয় না। দুয়েকটা ব্যতিক্রম যে নেই তা না! উজ্জ্বল রকম ব্যতিক্রম বুয়েট এবং পিএসসি। আমার ২৫ বছরের জীবনে বুয়েট থেকে কোন প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে তা শুনিনি। আর অনেক আগে পিএসসি নিয়ে হালকা কিছু গাইগুই কথা উঠলেও এখন সেটাও নেই। এত কোয়ালিটি মেইন্টেইন করার জন্য এদের অবশ্যই ধন্যবাদ প্রাপ্য। কিন্ত দুটা বা পাঁচটা প্রতিষ্ঠান দিয়ে দেশ না। আর তাই দেশের বাকি কোন জায়গায় কী হয় তার একটা নমুনা বলি।

যেহেতু আমি সদ্য গ্র্যাজুয়েট, খুব বেশি চাকরির পরীক্ষায় অংশ নেইনি। তাও যেগুলো নিয়েছি তার মধ্যে প্রশ্ন ফাঁসের ছড়াছড়ি ছিল নিত্য ব্যাপার। আমার চাকরি জীবনের এটেন্ড করা প্রথম পরীক্ষা ছিল জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থার (এনএসআই)। পরীক্ষার আগেই যেহেতু পুরাতন প্রশ্ন নিয়ে কিছু পড়ালেখা করতে হয় সেই হিসেবে জানি এনএসআই এর প্রিলি পরীক্ষা হয় সবচেয়ে সোজা ধাঁচের। পুরাতন প্রশ্ন পড়, টিকে যাবা! এমন কি ১০০ তে ৯০ এর নিচে পেলেও আপনাকে তারা ডাকবে না। অন্যান্য চাকরি পরীক্ষায় যেখানে ৬০% নম্বর পেলেও রিটেন দেয়া যায় সেখানে এনএসআই তে ৯০% মার্কস পেয়েও টেকা যায় না এই ইনফরমেশনেই বোঝা যায় যে কতটা সহজ প্রশ্ন হয়।

ব্লগে 1,350 জন সাবস্ক্রাইব করেছেন,
ব্লগে প্রকাশিত লেখা ইনবক্সে পেতে সাবস্ক্রাইব করুন

আসল কথায় আসি। আমাদের পরীক্ষার সময় ছিল সকাল ১০টা। আমাদের পরীক্ষার হলে মোবাইল নিয়ে যাওয়া নিষেধ। আর ওনারা পরীক্ষার পরে প্রশ্নও নিয়ে নেন। আমি পরীক্ষার হল থেকে বের হয়েছি ১১.১০ এ; বাইরে দাঁড়ানো আমার অভিভাবকের সাথে গাড়িতে ওঠার পর মোবাইল খুলে দেখি ফেসবুকের স্বনামধন্য এক গ্রুপে ঠিক ১১টায় প্রশ্নের উত্তরসহ দিয়ে দেয়া হয়েছে। যেখানে কোন পরীক্ষার্থীর কাছেই প্রশ্ন নাই (ইনভিজিলেটরকে দিয়ে দিতে হয়েছে উত্তপত্রের সাথে) সেইখানে ঠিক ১১টার সময় ফেসবুকের গ্রুপে কিভাবে প্রশ্ন গেল? প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে কি হয় নাই সে কথা না হয় তোলাই থাক, বড় কথা হলো, ১১টা বাজে যে পরীক্ষা শেষ হয় তার উত্তর ১ মিনিটেরও কম সময়ে (১০০টা প্রশ্ন, তার মধ্যে ১৫টা ম্যাথ) কিভাবে সলভ করা গেল?

এবার আসি আরেক পরীক্ষার কথায়। অগ্রণী ব্যাংকের পরীক্ষা দিতে যাব। সকাল ১০টায় পরীক্ষা। এর আগের রাত ৯টায় ফোন আসল, 'মামা প্রশ্ন লাগব'? 'না দোস্ত' বলে ফোন রেখে দিলাম। না বলার কারনও আছে। জীবনের প্রথম চাকরি যদি চুরি করে হয় তাহলে নিজের কাছে অনেক ছোট হয়ে যাব সেইটাই সমস্যা। যা হোক, ১১টা পর্যন্ত রিভিশন দিয়ে ঘুমাতে যাব ঠিক তখন বান্ধবি নক দিল, 'এই নে প্রশ্ন, বেস্ট অফ লাক'। একটার পর একটা পেজ আসতে থাকল, আমি দেখতে থাকলাম। যেহেতু রক্ত মাংসের মানুষ আমি, লোভ কাজ করে, না দেখে থাকতেও পারলাম না। ১০০টার মধ্যে ৭০টা সহজ প্রশ্ন, বাকিগুলো একটু কঠিন আর ১০-১২টার মত প্রায় ভয়াবহ কঠিন। ভয়াবহ কঠিনগুলার উত্তর দেখে নিলাম। তারপর পরীক্ষার হলে যেয়ে দেখলাম ওই ১০০টাই এসেছে। ৮৭ টা প্রশ্নের উত্তর করে বের হয়ে এসে শুনি সবাই পেয়েছে এই প্রশ্ন। বিশেষত আমার ইউনিভার্সিটির হলের বাসিন্দা যারা, সবার কাছে ছিল। হলের এক বন্ধু বলেই বসল সে ১০০টায় ৯৫টা কারেক্ট করেছে কিন্ত তার এক্সাম ভালো হয়নি! সেই পরীক্ষা অবশ্য পরে বাতিল করা হয়েছিল। কিন্ত অমন এপিক লেভেলের প্রশ্ন ফাঁস আমি আমার এই জীবনে দেখিনি।

এইবার আসি পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নে। প্রত্যেক পরীক্ষার পরেই সাংবাদিকরা মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর কাছে ছুটে যান - 'স্যার, প্রশ্ন কি ফাঁস হইছে?' উনি হেসে হেসে বলেন, 'প্রশ্নই আসে না! কোন প্রমাণ নাই'। সাংবাদিকরা আমার চেয়ে অনেক অনেক ভালো জানেন তবুও ছোট্ট একটা উপদেশ দেই। পরের বার থেকে শিক্ষামন্ত্রী স্যারের কাছে না যেয়ে চলে যাবেন ইস্টার্ন মল্লিকার উলটো পাশের কোচিং সেন্টারগুলাতে। পরীক্ষার একদিন আগেই ওনাদের কাছে একদম পিওর প্রশ্ন পাওয়া যায়। এটা কারো থেকে শুনে বলছি তা কিন্ত না। নিজ চোখে দেখা সব। শুধু ওই সব কোচিং না, ঢাকার শাহজাহানপুর, নারায়ণগঞ্জ কোচিং পাড়া, কলেজ রোড; একটু খুঁজলেই পেয়ে যাবেন দুইদিন বা একদিন পর হতে যাওয়া পরীক্ষার প্রশ্নপত্র। একটা দেশে এত সহজে যখন প্রশ্ন পাওয়া যায় তখন 'শিক্ষার মান কমে গেছে' এসব রব উঠিয়ে কী লাভ? শিক্ষাই যেখানে নেই সেখানে শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা বাড়াবাড়ি।

একটা দেশ কত উপরে উঠবে সেটা কিন্ত জিডিপি নির্ধারন করে না, সেটা নির্ধারন করে শিক্ষা। আজকের শিশুকে আমি কী শেখালাম সেটার উপর নির্ভর করে ৫০ বছর পর আমার দেশ কোথায় থাকবে। আমাদের জিডিপি প্রতি বছর ১% হারে বাড়ছে কিন্ত নীতি আর শিক্ষা কমছে ৯৯% হারে। আমরা ক্রিকেট নিয়ে চিন্তা করি। ফুটবল-হকি নিয়ে লজ্জা পাই। কিন্ত শিক্ষা নিয়ে দেশের হাতে গোনা মানুষ ছাড়া আর কারো কোন চিন্তা নেই। তাই দু'দিন আগে যে শিক্ষা মন্ত্রনালয়কে আমার ইউনিভার্সিটি বলতে পারতো - দেখো, তোমরা প্রশ্ন ফাঁস করো তাই তোমার পাস করা স্টুডেন্টরা আমার কাছে এসে ধরা খায়, আমার সেই ইউনিভার্সিটিই এখন সামিল হলো 'প্রশ্ন ফাঁস হয় নাই' চরিত্রের সাথে। দেশটা আমরা খাদের কাছে অনেক আগেই নিয়ে গেছি, এখন দুই একটু ধাক্কা লাগবে খাদে ফেলে দিতে। বাংলাদেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর চাকরি দেয়ার প্রতিষ্ঠানগুলো সেই ধাক্কাটুকু দেয়ার কাজ নিজের কাঁধেই সম্ভবত তুলে নিচ্ছেন!

বিডিনিউজ লিংক

6 Comments

  1. অসাধারণ লিখেছ নির্ঝর। তোমার লেখাগুলো আগেই পড়েছিলাম, তবে এই লেখাটা চোখে পড়ে নি। আজ পড়লাম। ভালো লিখেছ, চালিয়ে যাও।

  2. শাদনান মাহমুদ নির্ঝর ভাই, আপনার লেখা পড়ে যেমন খুব ভালো লাগলো আবার আপনার কিছু বাস্তবিক ঘটনা পড়ে কিছুটা ব্যথিতও হলাম। অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম এই বিষয়টি নিয়ে কিছু লিখবো, কিন্তু আপনার লেখা পড়ে মনে হচ্ছেনা যে আর কিছু লিখতে হবে। কারন আপনি অনেক ভালো লিখেছেন।

    আপনার লেখা পড়ে প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি এখন বেশ পরিষ্কার হয়ে গেছে সবার কাছে, অন্ততপক্ষে এই লেখাটি যারা পড়েছেন। এখানে আমি একটি কথা বলতে চাই সেটি হচ্ছে, প্রশ্ন ফাঁসের জন্য আমরা শুধু প্রশ্ন ফাঁসকারীদের দোষ দিয়ে থাকি যা ঠিক নয়। প্রশ্নফাঁসের জন্য একজন শিক্ষার্থী/আবেদনকারীও দায়ী থাকবে। যেমন ধরুন খুদা লাগলে আমরা খাই, না লাগলে আমরা খাইনা। একজন শিক্ষার্থী/আবেদনকারীর প্রয়োজন হয় বলেই কিন্তু ভর্তি/ চাকরি/ প্রাতিষ্ঠানিক পরীক্ষা গুলোর প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। শুনেছি ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্র অনেক মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে কিনতে হয়। তাহলে বলেন তো ভাই এই ক্ষেত্রে, অভিভাবকগণও কি দায় এড়াতে পারে??? আমার এই প্রশ্নের উত্তরটা বোধয় কিছুটা স্পর্শকাতর হলেও হতে পারে। যাই হোক, পরিশেষে একটা কথাই বলতে চাই। সেটা হলো, হোক না ফাঁস প্রশ্নপত্র, আমরা যদি না নেই তাহলেই তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আমরা কেউই যদি ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা না দেই তাহলে দেখা যাবে যারা লাভের আশায় প্রশ্নপত্র ফাঁস করে তারাও এই কাজটি করতে উৎসাহিত বোধ করবে না আশা করি। সব শেষে শুভেচ্ছা এবং ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপনার ভালো একটি লেখার জন্য।

    1. অনেক ধন্যবাদ পাভেল ভাই।

      না, আসলে কোন একটা নির্দিষ্ট পক্ষের দোষ না। ব্যাপারটা হয়ে গেছে চক্রের মত। কেউ আগে আগে দুর্নীতি করে প্রশ্নটা হাতে পেতে চায় বলেই আরেক পক্ষ প্রশ্নটা ফাঁস করে। দোষ দুই পক্ষের ই সমান। একটা জিনিস খেয়াল করে দেখবেন, জিপিএ ৫ যুগের আগে পরীক্ষায় অনেক নকল হত, কিন্ত পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন কিন্ত আগের দিন ফাঁস হয়ে গেছে এমন রব উঠত না, কারন প্রযুক্তি ছিল না, আর তখন স্ট্যান্ড, স্টার কে পাইতে পারে সবাই আগেই ধারনা করতে পারত, তাই লুকোচুরির কারন ছিল না। এখন একটা নামী কলেজের ৩০০ জন পরীক্ষা দিলে ২৯৬ জন পায় এ প্লাস, বাকি ৪ জনকে ধরা হয় ট্র্যাশ হিসেবে। কোন অভিভাবক চায় না তার সন্তান ট্র্যাশ হিসেবে গায়ে মার্ক লাগাক, এই কারনে অতি স্পর্শকাতর অনেক অভিভাবক এর পিছনে ছোটেন। পাবলিক পরীক্ষায় অবজেকটিভ পার্টটা উঠায় দিলেই প্রশ্নপত্র ফাঁস ৯৫% কমে যাবে।

      আর আপনার ওই কথাটা সুন্দর যে প্রশ্নপত্র ফাঁস হইলেও আমরা নিব না, কিন্ত এখন কি আদৌ সম্ভব সেটা? ২০ টা পোস্টের জন্য পরিক্ষার্থী যদি ৭০০০০ থাকে, আর প্রশ্ন যদি কোন কারনে ফাঁস হয় তাহলে আপনি যতই পড়াশোনা করেন, অনেস্ট হন, আপনার জন্য চাকরি পাওয়া ইম্পসিবল। OMR রিডার শুধু উত্তর ডিটেক্ট করতে পারে, অনেস্টি না। যে ডিজঅনেস্টি করে ১০০ টায় ৯৯ টা কারেক্ট করবে তারেই নিবে, যে অনেস্টি দেখায় ৮০ টা কারেক্ট করছে তাঁকে না। ৭০০০০ এ যদি মাত্র ২০ টা মানুষ প্রশ্নটা পায় তাহলেই কিন্ত আপনার সুযোগ শেষ।

      সবকিছুর সমাধান একমাত্র যারা প্রশ্নটা করেন তাদের কাছেই আছে, ওনারা চাইলেই আর প্রশ্নটা কোন ভাবেই ফাঁস করা পসিবল না। সব কিছুর সমাধান যাদের হাতে ওনারা উটপাখির মত মুখ গুঁজে থাকেন সেটাই সমস্যা।

  3. শাদনান মাহমুদ নির্ঝর ভাই, আপনার লেখা পড়ে যেমন খুব ভালো লাগলো আবার আপনার কিছু বাস্তবিক ঘটনা পড়ে কিছুটা ব্যথিতও হলাম। অনেক দিন ধরেই ভাবছিলাম এই বিষয়টি নিয়ে কিছু লিখবো, কিন্তু আপনার লেখা পড়ে মনে হচ্ছেনা যে আর কিছু লিখতে হবে। কারন আপনি অনেক ভালো লিখেছেন।

    আপনার লেখা পড়ে প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি এখন বেশ পরিষ্কার হয়ে গেছে সবার কাছে, অন্ততপক্ষে এই লেখাটি যারা পড়েছেন। এখানে আমি একটি কথা বলতে চাই সেটি হচ্ছে, প্রশ্ন ফাঁসের জন্য আমরা শুধু প্রশ্ন ফাঁসকারীদের দোষ দিয়ে থাকি যা ঠিক নয়। প্রশ্নফাঁসের জন্য একজন শিক্ষার্থী/আবেদনকারীও দায়ী থাকবে। যেমন ধরুন খুদা লাগলে আমরা খাই, না লাগলে আমরা খাইনা। একজন শিক্ষার্থী/আবেদনকারীর প্রয়োজন হয় বলেই কিন্তু ভর্তি/ চাকরি/ প্রাতিষ্ঠানিক পরীক্ষা গুলোর প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। শুনেছি ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্র অনেক মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে কিনতে হয়। তাহলে বলেন তো ভাই এই ক্ষেত্রে, অভিভাবকগণও কি দায় এড়াতে পারে??? আমার এই প্রশ্নের উত্তরটা বোধয় কিছুটা স্পর্শকাতর হলেও হতে পারে। যাই হোক, পরিশেষে একটা কথাই বলতে চাই। সেটা হলো, হোক না ফাঁস প্রশ্নপত্র, আমরা যদি না নেই তাহলেই তো সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আমরা কেউই যদি ফাঁসকৃত প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা না দেই তাহলে দেখা যাবে যারা লাভের আশায় প্রশ্নপত্র ফাঁস করে তারাও এই কাজটি করতে উৎসাহিত বোধ করবে না আশা করি। সব শেষে শুভেচ্ছা এবং ধন্যবাদ জানাচ্ছি আপনার ভালো একটি লেখার জন্য।

    1. অনেক ধন্যবাদ পাভেল ভাই।

      না, আসলে কোন একটা নির্দিষ্ট পক্ষের দোষ না। ব্যাপারটা হয়ে গেছে চক্রের মত। কেউ আগে আগে দুর্নীতি করে প্রশ্নটা হাতে পেতে চায় বলেই আরেক পক্ষ প্রশ্নটা ফাঁস করে। দোষ দুই পক্ষের ই সমান। একটা জিনিস খেয়াল করে দেখবেন, জিপিএ ৫ যুগের আগে পরীক্ষায় অনেক নকল হত, কিন্ত পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন কিন্ত আগের দিন ফাঁস হয়ে গেছে এমন রব উঠত না, কারন প্রযুক্তি ছিল না, আর তখন স্ট্যান্ড, স্টার কে পাইতে পারে সবাই আগেই ধারনা করতে পারত, তাই লুকোচুরির কারন ছিল না। এখন একটা নামী কলেজের ৩০০ জন পরীক্ষা দিলে ২৯৬ জন পায় এ প্লাস, বাকি ৪ জনকে ধরা হয় ট্র্যাশ হিসেবে। কোন অভিভাবক চায় না তার সন্তান ট্র্যাশ হিসেবে গায়ে মার্ক লাগাক, এই কারনে অতি স্পর্শকাতর অনেক অভিভাবক এর পিছনে ছোটেন। পাবলিক পরীক্ষায় অবজেকটিভ পার্টটা উঠায় দিলেই প্রশ্নপত্র ফাঁস ৯৫% কমে যাবে।

      আর আপনার ওই কথাটা সুন্দর যে প্রশ্নপত্র ফাঁস হইলেও আমরা নিব না, কিন্ত এখন কি আদৌ সম্ভব সেটা? ২০ টা পোস্টের জন্য পরিক্ষার্থী যদি ৭০০০০ থাকে, আর প্রশ্ন যদি কোন কারনে ফাঁস হয় তাহলে আপনি যতই পড়াশোনা করেন, অনেস্ট হন, আপনার জন্য চাকরি পাওয়া ইম্পসিবল। OMR রিডার শুধু উত্তর ডিটেক্ট করতে পারে, অনেস্টি না। যে ডিজঅনেস্টি করে ১০০ টায় ৯৯ টা কারেক্ট করবে তারেই নিবে, যে অনেস্টি দেখায় ৮০ টা কারেক্ট করছে তাঁকে না। ৭০০০০ এ যদি মাত্র ২০ টা মানুষ প্রশ্নটা পায় তাহলেই কিন্ত আপনার সুযোগ শেষ।

      সবকিছুর সমাধান একমাত্র যারা প্রশ্নটা করেন তাদের কাছেই আছে, ওনারা চাইলেই আর প্রশ্নটা কোন ভাবেই ফাঁস করা পসিবল না। সব কিছুর সমাধান যাদের হাতে ওনারা উটপাখির মত মুখ গুঁজে থাকেন সেটাই সমস্যা।

Leave a Comment